নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় গুজব ছড়ানো পোস্ট করে শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠে মো. মাহবুবুর রহমান নামে একজনের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে মঙ্গলবার তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশের একটি দল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করবেন বলে বুধবার (১৮ মে) বিএসইসি জানিয়েছে। বিএসইসি থেকে জানানো হয়েছে, গত ১৯ ডিসেম্বর মো. মাহবুবুর রহমান ‘শেয়ারবাজার ২০২১’ নামক ফেসবুক পেজে পোস্ট দেন, ‘যে যা পারেন সেল দিয়ে বের হয়ে যান। ইনডেক্স ৫৬০০ পর্যন্ত পড়বে………প্যানিক নয় বাস্তবতা!’
বিএসইসি’র ‘সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’র পর্যবেক্ষণে মাহবুবুর রহমান ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় শেয়ারবাজার সম্পর্কিত গুজব সৃষ্টিকারী পোস্ট করে শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন বলে উঠে আসে। এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে কারসাজি করাই উদ্দেশ্য।
গত ২৩ ডিসেম্বর মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় কমিশনের পক্ষে উপপরিচালক মুন্সী মো. এনামুল হক একটি এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মো. মাহবুবুর রহমান বর্তমানে ক্যাজুয়াল কর্মচারী হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কাজ করছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারবাজার সম্পর্কিত মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য প্রচার করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি উল্লিখিত কার্যকলাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্ররোচনা ও প্রলুব্ধ করে বেআইনিভাবে লাভবান হয়ে আসছেন। এরূপ কার্যকলাপের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করাসহ সমূহ ক্ষতিসাধন করছেন। যা শেয়ারবাজার তথা বিনিয়োগকারী এবং সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম।
শেয়ারবাজারে এমন চক্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিনব উপায়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। তারা শেয়ারবাজারকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে ও স্বীয় অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার নিমিত্তে বিভিন্ন অপকর্ম করছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতর্কসহ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মো. মাহবুবুর রহমান উল্লেখিত ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্ররোচনা করে প্রতারণার জালে ফেলছে বলে এজাহারে বর্ণনা করা হয়।
উল্লেখ্য, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে ‘সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি’র মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের (এমএসআইডি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে এ ‘সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’র কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
শেয়ারবাজারে গুজব নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে আসছে বিএসইসি। ইতোমধ্যে বিএসইসির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১টি গুজব সৃষ্টিকারী ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গুজব সৃষ্টিকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব আইডির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করছে কমিশন।
শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর কমিশনের চেয়্যারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম স্বাক্ষরিত জারিকৃত আদেশে শেয়ারবাজারের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট অথবা শেয়ারবাজার বা সিকিউরিটিজ লেনদেনের সাথে যেকোনো উপায়ে সম্পর্কিত সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহকে সিকিউরিটিজ মার্কেট ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোন মাধ্যমে বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসই এর নাম বা লোগো ব্যবহার করে কোন তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে আদেশ প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে যে কোন লিস্টেড সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য বা অন্য কোন বিষয়ে পূর্বানুমান কিংবা বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে- এমন কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতেও আদেশ প্রদান করা হয়।