নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ারবাজার এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত কর্মদিবসে ২৪ পয়েন্ট সূচক পতন হলেও, ১১৭ কোটি টাকারও বেশি বর্ধিত লেনদেন বিনিয়োগকারীদের উজ্জ্বল অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছিল। এই লেনদেনই বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়। আজকের শুরুতে ২০ পয়েন্টের বেশি উত্থান সেই আশাকে আরও বাড়িয়ে দেয়, যা বাজারে ক্রয় চাপ এবং সুযোগ সন্ধানী বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা নিশ্চিত করে।
দিনের শেষভাগে সূচক ৪৬.৫ পয়েন্টের বেশি কমলেও, এই পতনকে বাজারের কাঠামোবদ্ধ পুনর্বিন্যাস হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আজ বাজারে ৭৮৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার যে উল্লেখযোগ্য লেনদেন হয়েছে, তা প্রমাণ করে বড় বিক্রয় চাপ সত্ত্বেও ক্রেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এই লেনদেনের পরিমাণ ইঙ্গিত দেয় যে, বাজারে মূলধনের প্রবাহ এখনও শক্তিশালী এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন।
যদিও প্রায় সাড়ে তিন গুণ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে, এটি বাজারের একটি সাময়িক ভারসাম্যহীনতা মাত্র। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কর্পোরেট মুনাফার প্রত্যাশার কারণে এই দুর্বলতা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং, আজকের পতনের মধ্য দিয়ে দুর্বল শেয়ারগুলোর দাম আকর্ষণীয় স্তরে পৌঁছেছে। এটি আগামী দিনে জ্ঞানী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ক্রয়ের অসাধারণ সুযোগ তৈরি করেছে, যা বাজারকে দ্রুত উল্টো পথে চালিত করতে সাহায্য করবে।
সোমবার বাজার পর্যালোচনা
আজ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় পতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৬.৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৭৭ পয়েন্টে। অন্যদিকে, ডিএসইএস সূচক ১০.৩৫ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ১ হাজার ১৬১.৫৪ পয়েন্টে, আর ডিএসই-৩০ সূচক ২৩.৮৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৬৪.৯৫ পয়েন্টে।
লেনদেনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আজ ডিএসইতে মোট ৪০১টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের দর বেড়েছে, ২৮২টির দর কমেছে, আর ৩৪টির দর অপরিবর্তিত ছিল। বাজারে সার্বিকভাবে বিক্রির চাপ বেশি থাকলেও লেনদেনের অঙ্কে কিছুটা বৃদ্ধি দেখা গেছে।
ডিএসইতে আজ মোট ৭৮৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের ৭৩৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা থেকে প্রায় ৫০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ সূচক পতন হলেও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে, যা বাজারে সক্রিয়তার ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের সঙ্গে সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। এদিন সিএসইতে মোট ১২ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগেরদিনের ১২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা থেকে সামান্য কম।
সিএসইতে আজ ২১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৬০টির দর বেড়েছে, ১৩৮টির দর কমেছে এবং ১৯টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
দিন শেষে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৮.৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৭৯.১৪ পয়েন্টে। আগেরদিন এ সূচক ৯৯.১৫ পয়েন্ট বেড়েছিল, ফলে আজকের পতনকে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ‘স্বল্পমেয়াদি ধাক্কা’ হিসেবে দেখছেন।

