শেয়ারবাজারে লেনদেন ফের সাড়ে তিন মাসের সর্বনিম্নে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার (২২ অক্টোবর) সূচকের সামান্য ইতিবাচকতার মধ্যে লেনদেন শেষ হয়েছে। আগের দিনের ২২ পয়েন্টের বেশি পতন কাটিয়ে আজ সূচক কিছুটা বাড়লেও, বাজারের এই উত্থানকে দুর্বল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ আজ ডিএসইতে বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটদর কমেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ কমে গিয়ে তা সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে, যা বাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হ্রাসের ইঙ্গিত।

আজকের এই লেনদেন চিত্র বাজারে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। সূচক কিছুটা বাড়লেও, বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমে যাওয়ায় এটি প্রমাণ করে, কিছু বৃহৎ মূলধনী কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিই কৃত্রিমভাবে সূচককে টেনে তুলেছে। এই ধরনের উত্থানকে বাজারের প্রকৃত বা টেকসই উন্নতি হিসেবে দেখা যায় না। যেখানে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক গতিশীলতা ও তারল্য অত্যন্ত জরুরি, সেখানে লেনদেন কমে রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লেনদেনে অংশগ্রহণ করার প্রবণতা কমে আসার ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে বাজারের গভীরতা এবং সামগ্রিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ধারাবাহিক পতনের পর একদিন সামান্য উত্থান হলেও বিনিয়োগকারীরা এখনো পুরোপুরি আস্থা ফিরে পাননি। মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাজারে তারল্য প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। এমন অবস্থায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অবশ্যই তারল্য প্রবাহ বাড়ানো এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আরও জোরালো এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় সূচকের সামান্য উত্থানও বাজারের দুর্বল ভিত্তিকে আড়াল করতে পারবে না।

বুধবারের বাজার পর্যালোচনা

আজ ডিসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫.৩৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৪.৬৯ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইএস সূচক ০.৫৭ পয়েন্ট বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৭.৭৮ পয়েন্ট, এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৫.২৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৭৪.১৭ পয়েন্টে।

দিনজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৪৫টির দর বেড়েছে, ১৭৮টির দর কমেছে এবং ৭৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

তবে সূচক বাড়লেও লেনদেনের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আজ ৩৫৫ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ৪৭৮ কোটি ১ লাখ টাকার চেয়ে প্রায় ১২২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কম।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দিন শেষে সূচক কিছুটা নিম্নমুখী ছিল। এদিন সিএসইতে ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ১২ কোটি ২৩ লাখ টাকার তুলনায় সামান্য বেশি।

মোট ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নেয়, এর মধ্যে ৭৫টির দর বেড়েছে, ৯২টির দর কমেছে, আর ১৬টির দর অপরিবর্তিত ছিল।

দিন শেষে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩.২৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪,২৮৯.৬৬ পয়েন্টে, যেখানে আগেরদিন সূচক বেড়েছিল ৩০.৩৮ পয়েন্ট।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *