মনজুরুর রহমানের ৬ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমপর্ণের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ। মুলত দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাত সংক্রান্ত তথ্য ডাটাবেজ থেকে মুছে ফেলার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান গত ১৮ এপ্রিল আগাম জামিন আবেদন করে ডাইরেকশন নিয়েছে।

তবে আদালত মনজুরুর রহমানকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমপর্নের নিদের্শ দিয়েছে। উল্লেখ্য মামলাটি পরিচালনা করছেন বিচারক মো: জাকির হোসেন। মামলার আইটেম নং ৬১৭। উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ আইডিআরএর অফিস সহকারী এমদাদুল হক ডিএমপির গুলশান থানায় মামলাটির আবেদন করেন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে গত মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি নথিভুক্ত হয়।

এ বিষয় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, এটা একটি মিথ্যা মামলা। মুলত সম্মান রক্ষার্থে জামিন নিয়েছি। এদিকে ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা লোপাটের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অডিট রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ, রাজস্ব, ফাঁকি, বকেয়া এবং অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নিয়োগ করা অডিট ফার্ম একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এ নিরীক্ষা চালায়। কোম্পানির অডিট কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য আইটি বিভাগ কালেকশন টেবিল, মানি রিসিট, প্রিমিয়াম রিসিট সংক্রান্ত প্রায় ৩০ হাজার ডেটা ডিলিট করেছে। অডিটরের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ডেটা ডিলিটের ঘটনা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, পুরো বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আইডিআরএ কর্তৃক নিয়োজিত একনাবিন অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্ম অডিট কার্যক্রম পরিচালনাকালীন গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর কয়েক দফা কোম্পানির আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সালের কাছে গণবীমা বিভাগের ডেটাবেজের তথ্য চেয়ে রিকুইজেশন দেয়। পরবর্তী সময়ে আইটি ইনচার্জ কাজী এহতেশাম ফয়সাল এবং ডেল্টা লাইফের এভিপি (আইটি) শেখ মহসিনের বিরুদ্ধে বীমা পলিসি গ্রাহকের ডেটা ডিলিটের অভিযোগ পাওয়া যায়।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর অডিট রিপোর্টে ডেটা ডিলিটসহ কোম্পানির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান, পরিচালক এবং বেশকিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। চলমান অডিট কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্যই আইটি বিভাগ থেকে ডেটা ডিলিট করা হয়েছে।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, একনাবিনের অডিট রিপোর্টে এসব ডেটা ডিলিটের বিষয়টিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টেও ডেটা ডিলিটের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাসপেন্ডেড পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর নির্দেশে মেসার্স ফেমস অ্যান্ড আর এবং মেসার্স হাওলাদার অ্যান্ড ইউনুস চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ফার্মদ্বয়ের পরিচালিত অডিট রিপোর্টে ২৫টি এবং ২২টি অডিট আপত্তি প্রকাশ হয়।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালীন বোর্ড থেকে কোনো ধরনের জবাব না পেয়ে বাধ্য হয়ে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ চার মাসের জন্য সাসপেন্ড করে আইডিআরএ।

একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে বীমা কোম্পানিটিতে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বীমা খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপর ১০ জুন ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আদেশ দেয় আইডিআরএ। নির্ধারিত উদ্দেশ্যসমূহ পূরণ না হওয়ায় এ আদেশ জারি করা হয়।

অন্যদিকে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার মেয়াদ চার মাস হলে ডেল্টা লাইফের পরামর্শকের দায়িত্বে থাকা সাবেক যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলামকে প্রতিষ্ঠানের নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রশাসক (যুগ্ম সচিব- অব) মো. রফিকুল ইসলাম। গত বছরের ১৩ অক্টোবর কোম্পানির সাবেক সদস্য মো. কুদ্দুস খানকে ডেল্টা লাইফের প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়েছে আইডিআরএ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *