বিনিয়োগকারীদের ২১ হাজার কোটি টাকা হাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে চলছে টম-জেরির খেলা। সূচক এই বাড়ছেতো, পরক্ষণেই কমছে। সকালে ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শুরু হলেও কিছুক্ষণ পরই শতাধিক পয়েন্ট সূচক গায়েব। আবার শতাধিক পয়েন্ট সূচক হাওয়া থেকে পরক্ষণেই ঘুরে দাঁড়ানোর বড় আভাস। টম-জেরির এমন খেলায় সপ্তাহশেষে বিনিয়োগকারীদের হাওয়া হয়ে গেল ২১ হাজার কোটি টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি সুস্থ-স্বাভাবিক শেয়ারবাজারের লেনদেন উঠা-নামার মধ্য দিয়েই আগায়। তবে গত কয়েক দিনের ধারা ছিল একেবারেই ভিন্ন। দিনের লেনদেন শুরু হয় চাঙ্গা প্রবণতা দিয়ে। কিন্তু পরক্ষণেই দেখা যায় বড় পতন, বড় আতঙ্ক। তারপর আতঙ্ক কিছুটা লাঘব হলেও পতনের ছোবলে বিনিয়োগকারীদের শরীর-মনে দাগ কেটে যায়। অস্থিরতার বৃত্তেই লেনদেন আটকে থাকে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের প্রতিদিনই দরপতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে এক সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ২১ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। বড় অঙ্কের বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ৮৭২ কোটি টাকায়। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৩১ হাজার ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ ডিএসইতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমে গেছে।

বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬০টির। আর ৬টির দাম অপরিবর্তিত ছিল।

এতে গেলো সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩০৭.২২ পয়েন্ট বা ৪.৬৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯০.২০ পয়েন্ট বা ১.৩৬ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৬.৭০ পয়েন্ট বা ০.১০ শতাংশ। অর্থাৎ তিন সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক হারিয়েছে ৪০৩ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা ২৩.০৭ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ২৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ৩৯৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হাজার ১৬২ কোটি ২০ লাখ টাকা বা ৪০.০৬ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে কমার কারণ গত সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে বিমা খাতের শেয়ারের। এখাতের শেয়ার চলতি বছরজুড়ে মন্দাভাবে রয়েছে। ধারাবাহিক মন্দায় এখাতের রেকর্ড ডিভিডেন্ড ও রেকর্ড মুনাফা করার শেয়ারও এক বছরের ব্যবধানে তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। এরমধ্যে প্রভাতী ইন্সুরেন্স উল্লেখ্যযোগ্য। কোম্পানিটি এবছর তালিকাভুক্তির পর রেকর্ড সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ড ও ইপিএস দেখিয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির শেয়ারদর বছরের ব্যবধানে ২০৫ টাকা থেকে নেমে ৭৩ টাকার ঘরে নেমে এসেছে। দর কমে গেছে তিন ভাগের এক ভাগের নিচে।

প্রভাতীয় ইন্সুরেন্সের মতো বিমা খাতে আরও অনেক কোম্পানি ডিভিডেন্ড ও মুনাফায়
ঝলক দেখিয়েছে। কিন্তু তারপরও কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর নেমে গেছে বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। অথচ বিমা খাতের কোম্পানিগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো পারফরমেন্স দেখাচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ব্যাংকান্সুরেন্স চালু করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফা অর্জনের বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে ভবিষ্যতে বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফায় আরও বড় ঝলক দেখা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই শীর্ষ পতন তালিকার ১০ কোম্পানির মধ্যে ৭টিই ছিল বিমা খাতের কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো- এশিয়া ইন্সুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স, প্রভাতী ইন্সুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স, তাকাফুল ইন্সুরেন্স, ইসলামি ইন্সুরেন্স ও ইস্টার্ন ইন্সুরেন্স। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিগুলো দর হারিয়েছে ১৮ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ। কোম্পানিগুলো মধ্যে আগের সপ্তাহের পতনের তালিকায়ও ছিল এশিয়া ইন্সুরেন্স ও প্রভাতী ইন্সরেন্স।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *