নিজস্ব প্রতিবেদক :
তারল্য সংকট দূর করতে গতবারের মতোই আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হতে পারে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এবিআর) কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ওই প্রস্তাবের আলোকে সার্বিক দিক বিবেচনা করে কিছু শর্ত সাপেক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর হবে এবং ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অপরদিকে, অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত হবে এ অর্থ। ফলে, পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি উভয়ই শক্তিশালী হবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৬ মে) অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বৈঠকে হয়েছে। ওই বৈঠকে পুঁজিবাজার নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দুই বছর লক-ইন শর্তে আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হতে পারে বলে আলোচনায় উঠে এসেছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ২৫ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। সেই সঙ্গে করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা আদায়ের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। তবে, বিষয়টি গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেট বক্তৃতায় ছিল না। কিন্তু পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বিভিন্ন বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রেখে অর্থবিল ২০২১-২২ পাস করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর (ডিএসই) পরিচালক মো. শাকিল রিজভী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখলে ভালোই হবে। এ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে ডিএসই প্রস্তাব করেছে। যেসব অর্থ কোনো কারণে বৈধ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়নি, সেগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে এবং অপরদিক ওই অর্থ করের আওতায় আসবে। দেশের বৃহৎ স্বার্থে সরকার এ সুবিধা দিতে পারে। এ অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ না দিলে বিদেশে পাচার হওয়া আশঙ্কা থাকে। অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত করতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া একটি ভালো মাধ্যম। আমি মনে করি, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার ভালো দিকগুলো বেশি আছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়াদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘আসন্ন বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বিএমবিএ। এ সুবিধা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাখা হলে পুঁজিবাজার লাভবান হবে না। আমরা বিষয়টিকে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কারণ, যদি অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়মিত করার সুযোগ না দেওয়া হয়, তার অপব্যবহার হওয়া আশঙ্কা থেকে যায়। তাই, এ অপব্যবহার রোধ করে সঠিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখার জন্য এ অর্থ নিয়মিত করার সুযোগ উচিত।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. সাজিদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিলে ভালো হয়। সেজন্য ডিবিএর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ অর্থ আসলে তারল্য প্রবাহ বাড়াসহ পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, আসন্ন বাজেটে বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রবেশের সুযোগ দিলে শেয়ারবাজার আরও গতিশীল হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।