তেল বিপননে একচেটিয়া আধিপত্য হারাবে পদ্মা মেঘনা যমুনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে বছরে প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই এককভাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিয়ন্ত্রিত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পদ্মা ওয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা ওয়েল কোম্পানির মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে। যার ফলে সারা দেশে তেল বিপননে এই তিন কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য বজায় ছিল।

সম্প্রতি সরকার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রিতে বেসরকারি খাতকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে ‘বেসরকারি পর্যায়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিপূর্বক মজুত, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ও বিপণন নীতিমালা, ২০২৩’ খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

নীতিমালাটি কার্যকর হলে বিপিসির মাধ্যমে সারা দেশে বিপনন কাজে নিযুক্ত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের পাশাপাশি ভবিষ্যতে বেসরকারি খাতেও বিপনন কোম্পানি গড়ে ওঠবে। তখন রাষ্ট্রায়াত্ব এ তিন কোম্পানি তুমুল প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময়ে এলপিজি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েলই কেবল বাজারজাত করতো। এরপর এখাতে বেসরকারি খাত চলে আসে। এখন এলপিজি বাজারজাত করণে বেসরকারি খাতই নেতৃত্ব দিচ্ছে।

জানা যায়, দেশে এককভাবে বিপিসি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। সেই তেল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধিত হয়ে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ ও বাজারজাত করা হয়।

এছাড়া সরকারি খাতের তিনটি ও বেসরকারি খাতের ১৩টি রিফাইনারির (কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্ট) মধ্যে চারটি দেশীয় ও বিদেশ থেকে কনডেনসেট সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, সলভেন্ট, মোটর স্প্রিট, কেরোসিন সুপিরিয়র অয়েল, মিনারেল তারপেনটাইনসহ বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করে।

এছাড়া বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো শর্তসাপেক্ষে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারে। এখাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিশোধিত তেল বিপিসির কাছে বিক্রির নিশ্চয়তা দেয়ার পাশাপাশি জ্বালানি পণ্য রপ্তানিরও সুযোগ রাখা হয়েছে নীতিমালায়।

যদিও অপরিশোধিত তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রিতে অংশগ্রহণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, সুপার রিফাইনারি, পেট্রোম্যাক্স ও অ্যাকোয়া রিফাইনারি বড় ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। আর অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ভিত্তিতে বসুন্ধরা গ্রুপ চট্টগ্রামে ভূমি উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করেছে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, রিফাইনারির চূড়ান্ত অনুমোদন প্রাপ্তি/থাকা সাপেক্ষে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ও ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৮০ একর জমি থাকতে হবে, ১৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতার প্লান্ট হতে হবে, গত ৫ বছরের মধ্যে টানা তিন বছর ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন থাকতে হবে। আর তেল পরিবহনে নিজস্ব মাদার ভেসেলসহ লাইটার ভেসেল থাকতে হবে।

এছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তা চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বিপিসির অনুকূলে ২৫০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করতে হবে। আর রিফাইনারি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য দেশি ও বিদেশি অংশীদার নিতে পারবেন। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে মালিকানা বদল করা যাবে না।

এই বিষয়ে কয়েকজন বেসরকারি রিফাইনারি উদ্যোক্তা বলেন, দেশে বেসরকারি খাতের ১৩টি রিফাইনারি আছে। ৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি অলস বসে আছে। এসব রিফাইনারিতে আমাদের কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। আমাদের দাবি, আমাদের মধ্যে যাদের অবকাঠামো বা পরিশোধনের সক্ষমতা বছরের ২ থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন, তাদের সুযোগ দেয়া উচিত।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি তেলের আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে চায় সরকার। তাদের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ফলে এককভাবে বিপিসির যে পরিচালনগত ও আর্থিক চাপ বাড়ছে তা এড়াতে পারবে। তাই নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *