অবণ্টিত লভ্যাংশের ৬শ’ কোটি টাকা হস্তান্তর করেছে কোম্পানিগুলো

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: আর্থিক বছর শেষে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডগুলো আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। নানা কারণে সেই অর্থ সংগ্রহ করে না বিনিয়োগকারীরা। এতদিন অবণ্টিত লভ্যাংশ কোম্পানিগুলো আর্থিক প্রতিবেদনে আনক্লেইমড ডিভিডেন্ড (দাবিহীন লভ্যাংশ) শিরোনামে প্রদর্শন করতো। কিন্তু ২০২১ সালে অবণ্টিত লভ্যাংশ নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সিএমএসএফ-এর গঠনের প্রধান উদ্দেশ পতনের সময় পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেয়া। অর্থাৎ পতনের সময় পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ করা। বিএসইসি বলছে, অবণ্টিত লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটির টাকা। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। আর বোনাস স্টক লভ্যাংশের বাজার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র বলছে, ফান্ড গঠনের পর এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অবণ্টিত লভ্যাংশ ফান্ডটিতে হস্থান্তর করেছে। এখন পর্যন্ত ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে এবং বাকি ৫০ কোটি টাকার মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।কিন্তু কিছু কোম্পানি সিএমএসএফে অর্থ হস্থান্তরে গড়িমসি করছে। তাই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএসইসি। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশ স্থিতিশীল তহবিলের ব্যাংক ও বিও হিসাবে জমা দেয়া না হলে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি ও সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে কমিশন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এর আগে উপরোক্ত বিষয়ে কমিশন থেকে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ডে নগদ ও স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ বা যেকোন তহবিল বা অবণ্টিত শেয়ার বা অমীমাংসিত বা অনাকাক্সিক্ষত দাবিহীন বা ফেরত না হওয়া পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের অর্থ হস্তান্তর করার কথা ছিল।চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, কিছু কোম্পানি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উল্লিখিত বিধি এবং কমিশনের নির্দেশের বিধান অনুযায়ী অবণ্টিত নগদ ও স্টক বা বোনাস শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন করেনি। তাই ওই কোম্পানিগুলোকে তাদের অবণ্টিত লভ্যাংশ আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাংক ও বিও হিসাবে স্থানান্তর করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। আর এ নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে আর্থিক জরিমানাসহ সিকিউরিটিজ আইনানুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিষয়টি ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি, ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ডের চিফ অফ অপারেশন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা অনেক সময় দিয়েছে এবং অপেক্ষা করেছি। চলতি মাসের পরে আর সময় দেয়া হবে না। ৩১ মার্চের পরে কমিশন কঠোর হবে। কোন কোম্পানি যদি চলতি মাসের মধ্যে যদি ওই লভ্যাংশের হিসাব দিতে না পারে এবং ফান্ড কোথায় রয়েছে, তা বলতে না পারে ও স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে স্থানান্তর না করে, তাহলে কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। অবণ্টিত লভ্যাংশের থেকে কয়েকগুণ বেশি জরিমানা হবে।

এ প্রসঙ্গে সিএমএসএফ চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোম্পানিগুলো প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে হস্তান্তর করেছে। আমরা বিএসইসি’র নির্দেশে দর পতনের বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করি।’ ‘ফান্ডটি যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করতে ইতোমধ্যে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর্ন্তজাতিক মান বজায়ে রেখে যেন ফান্ড ব্যবস্থাপনা হয় আমরা সে দিকে নজর দিচ্ছি।’

উল্লেখ্য, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড পরিচালনার জন্য ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ বিএসইসি প্রণয়ন করেছে। গত বছরের ২৭ জুন রুলসটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী, ফান্ডটি ব্যবস্থাপনার জন্য ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস রয়েছে।

এদিকে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ সব শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারের কাছে অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। কোন কারণে তিন বছরের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টন করা না গেলে তা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত বিশেষ তহবিল ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) হস্তান্তর করতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *