
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়া আর্থিক বছরের জন্য অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি। মূলত আগের সময়কার ঋণ অনিয়ম, দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা, খেলাপি ঋণের উচ্চহার এবং মূলধন ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংককে ডিভিডেন্ড ঘোষণার অনুমতি দেয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অনেক ব্যাংক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসাধু ঋণ অনুমোদন, অর্থপাচার ও ঋণ জালিয়াতির ফলে এসব ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে তারা প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিভিডেন্ড দেওয়ার যোগ্যতা হারায়।
২০২৪ সালের আগস্টের পর বর্তমান সরকার বেশ কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকে নতুন বোর্ড গঠন করে। দায়িত্ব নেওয়ার পর এই নতুন বোর্ডগুলো অনিয়মের তদন্ত, ঋণের পুনর্মূল্যায়ন ও শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ শুরু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সহায়তা করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী যেসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল, যাদের প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি রয়েছে, তারা ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারে না। এই কারণে এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি।
বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত বোর্ডগুলো এসব ব্যাংকের অবস্থা পুনরুদ্ধারে নিরলসভাবে কাজ করছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন খ্যাতনামা ব্যাংকার, সাবেক এমডি ও নিরীক্ষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দুর্বল ব্যাংকগুলোর সংস্কার এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
‘ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স-২০২৫’ ইতোমধ্যে পাস হয়েছে, যার মাধ্যমে দেউলিয়া বা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন এবং লোপাটে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পথ সুগম হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান উদ্যোগগুলো সফল হলে ভবিষ্যতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং বিনিয়োগকারীরা নিয়মিত ডিভিডেন্ড পাওয়ার আশা করতে পারবেন।
শুভ ইসলাম/
RELATED POSTS
View all