নিজস্ব প্রতিবেদক : কয়েকদিন যাবত ভারত-শ্রীলঙ্কার মতো এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন চলছিল। বলা হচ্ছিল, বিশ্ব পরিস্থিতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ায় শেয়ারবাজারে তার প্রভাব পড়ছে। কিন্তু গত দু্দিন যাবত ভারত ও শ্রীলঙ্কার শেয়াবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গতকাল দেশ দুটির শেয়ারবাজারে দেখা মিলেছে বড় উল্লম্ফনের। অথচ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের পতন আরও ঘনীভূত হয়েছে।
নানা গুজবে টানা তৃতীয় দিন বড় পতন হয়েছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের। আজ আরও শতাধিক পয়েন্ট সূচক হারিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ১০ মাসের সর্বনিম্ন অবস্থানে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে মন্দাভাব ঝেঁকে বসেছে। তবে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর সেই মন্দাভাব ধসে পরিণত হয়। তারপর ঈদের আগে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়। ঈদের ছুটিশেষে পরিস্থিতি ইতিবাচকও ছিল। কিন্তু সমস্যা বাঁধিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি। প্রতিষ্ঠানটির ঋণ সমন্বয়ের কারণে শেয়ার বিক্রি শুরু করায় বাজারে দেখা দেয় নতুন করে আতঙ্ক।
এর প্রেক্ষিতে বাজারে স্বাভাবিক গতি ফেরাতে মঙ্গলবার বিকালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও আইসিবি বৈঠকে বসে। বৈঠকশেষে বাজার টেনে তুলতে চার সিদ্ধান্তের খবর আসে। এরমধ্যে আসিবি ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সময় পিছিয়ে দিতে আবেদন করেছে। পাশাপাশি শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে আইসিবিকে আরও টাকা দেয়া হবে। আবার ডিএসইর কাছে ৫০০ কোটি টাকা এফডিআর চাওয়া হবে। ঋণ পরিশোধে আইসিবি যে শেয়ার বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করেছিল, সেই অর্থ ফের বিনিয়োগ করা হবে।
এসব খবরে আজ বুধবার লেনদেন শুরুও হয়েছিল চাঙ্গা প্রবণতা দিয়েই। লেনদেন শুরুতে সূচকের বেশ ঊর্ধ্বগিতও দেখা যায়। লেনদেনের পাঁচ মিনিটের মধ্যে সূচক বেড়ে গিয়েছিল প্রায় ৪৪ পয়েন্ট। তারপর যে লাউ, সেই কদু। সূচকের ফের পিছুটান। লেনদেনের শেষ পর্যায়ে ১১৬ পয়েন্ট কমে যায়। যদিও লেনদেনশেষে বেশি দরে অ্যাডজাস্ট হওয়ায় সূচকের পতন স্থির হয় ৯৩ পয়েন্টে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের একটি অংশ বলছেন, বাজারে এখন নতুন করে গুজবের ডানা মেলেছে। নতুন গুজব হলো, ডলার বাজার চাঙ্গা হওয়াতে বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের টাকা ডলার বাজারে বিনিয়োগ করছেন। যে কারণে শেয়ারবাজারের পতন আরও ঘনীভূত হয়েছে।
কিন্তু অন্য একটি অংশ বিষয়টিকে গাঁজাখোরি গল্প বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, শেয়ারবাজারের টাকা ডলার বাজারে যাওয়ার যুক্তিসংগত কোন কারণ নেই। কারণ ডলার বাজারে এমনিতেই সংকট চলছে। সেখানে নতুন করে বিনিয়োগ করার সুযোগ কোথায়? এছাড়া, ডলার বাজারে যারা অভিজ্ঞ, ডলার সংকটে তারা নিজেরাইতো হিমশিম খাচ্ছে। নতুনরা সেখানে থিতু গড়বে কিভাবে?
আজকের বাজার পরিস্থিতি:
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ ৯৩.৫৮ পয়েন্ট বা ১.৪৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০৯.৯১ পয়েন্টে। ডিএসইর এই সূচকটি কমে ১০ মাস ৩ দিন বা ২০২ কার্যদিবস আগের অবস্থানে নেমেছে। এর আগে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই সূচকটি আজকের চেয়ে কম অর্থাৎ ৬ হাজার ৩০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।
ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৭.২৬ পয়েন্ট বা ১.২২ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৭.১৮ পয়েন্ট বা ১.১৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৯১.৫০ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৩৬.৪৮ পয়েন্টে।
ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৭৬২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৭৭৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকার।
ডিএসইতে আজ ৩৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২টির বা ১১.০২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩১০টির বা ৮১.৩৬ শতাংশের এবং ২৯টির বা ৭.৬১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৭০.০১ পয়েন্ট বা ০.৯০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৫.১৫ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫৩টির, কমেছে ২১৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির দর। আজ সিএসইতে ২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।