নিজেস্ব প্রতিবেদক: বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতির কারনে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) ৬টি ব্রোকারেজ হাউজের ফ্রি লিমিট বা সিকিউরিটিজ ক্রয়ের সুযোগ বন্ধ করে দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। তবে ঘাটতি পূরণের রিপোর্ট দেওয়ার পরে ৪টির ফ্রি লিমিট ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো ২টির ফ্রি লিমিটেডের স্থগিতাদেশ বহাল রয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার পরে বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত ব্যাংক হিসাবে অর্থ ও বিও হিসাবে সিকিউরিটিজের ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছে ডিএসই। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ৬টি ব্রোকারেজ হাউজের সিকিউরিটিজ ক্রয়ের সুযোগ (ফ্রি লিমিট) বন্ধ করে দেয়।
ডিএসইর শাস্তি বাস্তবায়নের ফলে গতকাল সকাল থেকেই ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীরা সিকিউরিটিজ ক্রয় করতে পারছিল না। এতে করে ব্রোকারেজ মালিক ও কর্মচারীদের উপরে তারা ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু শুরুতে হাউজ কর্তৃপক্ষও তার কোন কারন জানতে পারেনি। কারন তাদের নোটিশ না দিয়েই ফ্রি লিমিট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে হাউজগুলো থেকে যোগাযোগ করে বিনিয়োগকারীদের হিসাবে ঘাটতির কারনে ফ্রি লিমিট সুবিধা স্থগিতের বিষয়টি জানতে পারে।
ফ্রি লিমিট সুবিধা বন্ধ করা ব্রোকারেজ হাউজগুলো হচ্ছে- ডিএমআর সিকিউরিটিজ সার্ভিসেস, আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ, হেদায়েতউল্লাহ সিকিউরিটিজ, বালি সিকিউরিটিজ, এম-সিকিউরিটিজ ও শার্প সিকিউরিটিজ।
তবে বিএসইসি ২২ মার্চ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ঘাটতির বিষয়ে শাস্তির নির্দেশ দিলেও ডিএসই পূর্বের জন্য ফ্রি লিমিট সুবিধা বাতিল করায় অনেকে ক্ষুব্ধ। এছাড়া ঘাটতির বিষয়ে অভিযুক্তকে শুনানিতে না ডেকে ও তার ব্যাখ্যা না নিয়ে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই শাস্তি প্রদান করায়ও ক্ষোভ ওইসব ব্রোকারেজ হাউজ কর্তৃপক্ষের। তবে ডিএসইর দাবি, বিএসইসির চিঠিতে দোষী প্রমাণিত হওয়ার কোন বিষয় নেই। এছাড়া ডিএসইর কাছে থাকা সর্বশেষ মনিটরিং রিপোর্টের ভিত্তিতে ফ্রি লিমিট স্থগিত করা হয়েছে।
বিএসইসির নির্দেশনায় যা আছে :
ওই নির্দেশনায় অর্থ ও সিকিউরিটিজ ঘাটতি থাকা ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি মার্জিন রেগুলেশনের ফ্রি লিমিট সুবিধা স্থগিত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে মালিকানার বিপরীতে লভ্যাংশ প্রাপ্তি, আইপিও/কিউআইও কোটা, ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি ও ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর (ডিপি) নিবন্ধন সনদ নবায়ন ও নতুন শাখা বা ডিজিটাল বুথ খোলার সুবিধা স্থগিত থাকবে। এর বাহিরে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের অর্থ ও সিকিউরিটিজ ঘাটতি সমন্বয়ের পর ন্যূণতম ১ বছর সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জ বিশেষ তদারকি করবে বলে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিমাসে দুইবার সমন্বিত গ্রাহক হিসাব ও ডিপি-তে থাকা সিকিউরিটিজ যাচাই করা হবে।
ফ্রি লিমিট সুবিধা বাতিলের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ফেব্রুয়ারির ১০ বা তার পূর্বে কোন ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারী হিসাবে ঘাটতি ছিল। যা প্রমাণিত হওয়ার আগেই ডিএসই ওই ব্রোকারেজ হাউজের ফ্রি লিমিট বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ শুনানিতে ডেকে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজের ব্যাখ্যা শোনা দরকার ছিল। এছাড়া তাদের বর্তমানে সেই ঘাটতিও নেই। যা না শুনেই ডিএসই থেকে একটা শাস্তি আরোপ করে দেয়। হঠাৎ করে এমন শাস্তি দিলেতো আতঙ্ক ছড়ায়।
এ বিষয়ে শাস্তির আওতায় পড়া এক ব্রোকারেজ হাউজের কর্ণধার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, যোগ-বিয়োগ ভুল করে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিনিয়োগকারী হিসাবে ডিএসই ঘাটতি দেখায়। এজন্য ২২ মার্চের বিএসইসির নির্দেশনার পরিপেক্ষিতে ফ্রি লিমিট সুবিধা স্থগিত করে দেয়। যা করার আগে নোটিশও দেয়নি। স্থগিত করার কয়েক ঘন্টা পরে নোটিশ পাঠায়। অথচ সকালে লেনদেনে ক্রয় আদেশ দিতে না পেরে সবার মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়। অন্য হাউজগুলোতে পারলেও আমাদের হাউজে ক্রয় আদেশ দিতে না পারায় উৎকন্ঠা তৈরী হয়।
তবে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বিএসইসির নির্দেশনায় ঘাটতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার উল্লেখ নেই। আমরা ফ্রি লিমিট স্থগিত করেছি সর্বশেষ মনিটরিং রিপোর্টের ভিত্তিতে। এখন কেউ যদি ১০ ফেব্রুয়ারির ঘাটতি পরবর্তীতে পূরণ করে থাকে, তাহলে সেই রিপোর্ট ডিএসইতে জমা দেওয়া তার নিজের দায়িত্ব ছিল। এক ডিএসইর পক্ষে সবগুলো ব্রোকারেজ হাউজের নিয়মিত মনিটরিং করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, ৬টি ব্রোকারেজ হাউজের ফ্রি লিমিট স্থগিত করা হলেও ওরমধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগকারীদের হিসাবে ঘাটতি পূরণের রিপোর্ট জমা দেওয়ায় তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো ২টি হাউজ থেকে এ জাতীয় রিপোর্ট না দেওয়ায় ফ্রি লিমিট সুবিধা স্থগিত আছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার শঙ্কায় নাম বলতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান আইনে প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকার পর্যন্ত সিকিউরিটিজ ক্রয়ের ফ্রি লিমিট সুবিধা দেওয়া রয়েছে। তবে বড় বড় ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে এই লিমিট আরও বেশি করে রেখেছে।