নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবসায়িকভাবে ভালো যায়নি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের কোম্পানিগুলোর। এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির চাপে কোম্পানিগুলোর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা তলানিতে নেমেছে। এমনকি কয়েকটি কোম্পানিকে লোকসানও গুনতে হয়েছে। মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এক্ষেত্রে বড় নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
দেশের পুঁজিবাজারে চামড়া খাতের ছয়টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। সেগুলো হলো এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, ট্যানারি লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড ও সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড। এর মধ্যে বাটা সুর হিসাব বছর গণনা করা হয় জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে। কোম্পানিটি এখনো চলতি ২০২৩ হিসাব বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। এছাড়া জুলাই-জুন সময়ে হিসাব বছর গণনা করা সমতা লেদার কমপ্লেক্সও তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রন্তিকে এপেক্স ফুটওয়্যারের বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৩৬১ কোটি ২২ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কাম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৫৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১ হাজার ১৬২ কোটি ২৭ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮৪৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৮ কোটি ৪ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে নিট মুনাফা কমার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি জানিয়েছে, আলোচ্য সময়ে তাদের পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নজনিত কারণেও তাদের বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বিতরণসংক্রন্ত ব্যয়ও এ সময়ে বেড়েছে। এসব কারণে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে এপেক্স ট্যানারির বিক্রি হয়েছে ১৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে ৪৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বিক্রি কমার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যয় বৃদ্ধির চাপে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল ১৮ লাখ টাকা। আর চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৫৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে তুলনায় এ বিক্রি ৪১ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম। আগের হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছিল ৯৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল ৪৩ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
লোকসান হওয়ার কারণ হিসেবে এপেক্স ট্যানারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আলোচ্য সময়ে তাদের বিক্রি কমে গেছে। পাশাপাশি রাসায়নিক খরচ বৃদ্ধি, কোম্পানির অন্যান্য প্রচলিত ব্যয় ও পণ্য বিক্রির জন্য প্রচারণামূলক ব্যয় বেড়েছে। এসব কারণে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটিকে লোকসান গুনতে হয়েছে।
তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের আরেক কোম্পানি ফরচুন সুজের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৮৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, আগের হিসারে যা ছিল ৪১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৪৯ দশমিক ১৮ শতাংশ।
তালিকায় থাকা চামড়া খাতের সর্বশেষ কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১৭ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট লোকসান বেড়েছে ১৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর আলোচ্য হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল ৮ লাখ টাকা।