গত ১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। পরদিন থেকেই পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যেতে থাকে। ৩০ অক্টোবর বিএসইসি চেয়ারম্যান জানান, তারা নির্দেশনা পাল্টাচ্ছেন। দুই দিন পর জারি হলো নতুন নির্দেশনা।
পুঁজিবাজারে তিন সপ্তাহের টালমাটাল পরিস্থিতিতে ব্রোকারেজ হাউজে চেক জমা দিয়ে শেয়ার কেনার সুযোগ করে দিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তবে ব্রোকারেজ হাউজকে সেদিন বা পরের কর্মদিবসে চেক ব্যাংকে জমা দেয়াসহ চারটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় এই এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘এখন থেকে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের থেকে চেক, পে অর্ডার ডিমান্ড ড্রাফট বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত অন্য কোনো মাধ্যমে টাকা পেলে সেই টাকা নগদ করার আগে লেনদেন করতে পারবে।’
গত ১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। পরদিন থেকেই পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যেতে থাকে।
এর মধ্যে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ডিবিএর পক্ষ থেকে ডিএসই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, চেক নিয়ে নির্দেশনা না পাল্টালে পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়বে।
১৭ অক্টোবর এই চিঠির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে সত্যি সত্যি চাপের বিষয়টি দেখা যায় পরদিন থেকেই।
১২ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পুঁজিবাজারে সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৫০০। সেটি এখন নেমে এসেছে ৬ হাজার ৩৩৪এ। পৌনে তিন শ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হতে থাকার মধ্যে এই দরপতন বিনিয়োগকারীদেরকে আর্থিকভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর হারানোর পাশাপাশি লেনদেন কমতে কমতে এখন আট শ কোটির ঘরে নেমেছে, যা এক মাস আগেও দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে ছিল।
শিবলী রুবাইয়াত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না বিএসইসি। তিনি দেশে ফেরার পর প্রথম কর্মদিবসিই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।
সেদিনই তিনি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন, তারা চেক নির্দেশনা পাল্টাচ্ছেন, দুই এক দিনের মধ্যেই নতুন নির্দেশ জারি হবে।
বিএসইসি এমন নির্দেশনা দিয়েছে চেক দেয়ার পর ব্যাংকে তা জমা না দিয়ে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনার ৩৭টি ঘটনা ধরা পড়ার পর। এক টাকা বিনিয়োগ না করেও একটি চক্র এই কৌশলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
নির্দেশনা পাল্টালে আবার যদি একই কাজ হয়, তাহলে কী হবে- জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে বিএসইসি প্রধান বলেন, ‘চেক ডিস অর্নার হলেও কী হবে সেটাও তো বলে দিতে হবে। চেক নিয়ে করতে দেবো, সেখানে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।’
ব্রোকারেজ হাউজের জন্য চার শর্ত
বিএসইসির নির্দেশনায় চার শর্ত ও দুটি করণীয়ের কথা বলা আছে।
প্রথমত. বিনিয়োগকারীর জমা দেয়া চেক যদি ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংক সেদিন বা পরের কর্মদিবসে ব্যাংকে জমা না দেয়, তাহলে পরের এক বছরের জন্য আইপিওতে যোগ্য বিনিয়োগকারীর সুযোগ সুবিধা হারাবে তারা।
দ্বিতীয়ত. সেই চেক যদি বাউন্স করে, অর্থাৎ ব্যাংক হিসাবে যদি সমপরিমাণ টাকা পাওয়া না যায়, তখন ব্রোকারেজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের হিসাব থেকে সে টাকা দিতে হবে। সেটিও যদি না হয়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান আইপিওতে এক বছরের জন্য সব সুবিধা হারাবে।
তৃতীয়ত. যে গ্রাহকের চেক বাউন্স করবে, তিনি পরের এক বছর পুঁজিবাজারে আর চেকে লেনদেন করতে পারবেন না।
চতুর্থত. প্রতিটি স্টক ব্রোকারকে ডিজঅনার চেকের তালিকা মাস শেষ হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে বিএসইসিকে পাঠাতে হবে।
ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের করণীয় হিসেবে যেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
সেগুলো হলো: ১. গ্রাহককে অনলাইনে টানা স্থানান্তরে উৎসাহ দেবে প্রতিষ্ঠানগুলো এবং ২. এই শর্ত ও করণীয়গুলো বাস্তবায়ন করতে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজগুলো দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।