নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে শেয়ারের দাম কমাতে অভিনব পন্থা গ্রহণ করেছেন ৯টি ব্রোকারেজ হাউসের ১৫ জন ট্রেডার। আইন লঙ্ঘন করায় এই ট্রেডারদের লেনদেন কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার বা সাসপেন্ড করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আজ সোমবার ১৫ জন ট্রেডারকে বহিষ্কারের এ নির্দেশ দিয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শেয়ারবাজারে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের ট্রেডাররাই মূলত লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বিনিয়োগকারীদের ক্রয় বা বিক্রয়াদেশ তাঁরাই বাস্তবায়ন করে থাকেন। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, ট্রেডারদের বলা হয় অথরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভ বা অনুমোদিত প্রতিনিধি। লেনদেনের ক্ষেত্রে এই ট্রেডারদের সুনির্দিষ্ট আইন বা আচরণবিধি মেনে চলতে হয়। কিন্তু আজ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর পর ৯টি ব্রোকারেজ হাউসের ১৫ জন ট্রেডার সিকিউরিটিজ আইন ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নেন। এসব ট্রেডাররা কোনো দাম না উল্লেখ না করে বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রির আদেশ দেন। যেটিকে মার্কেট প্রাইস বা জিরো প্রাইস অর্ডার বলা হয়।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, যে ৯টি ব্রোকারেজ হাউসের ১৫ ট্রেডার লেনদেনের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেগুলো হলো আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি, পার্কওয়ে সিকিউরিটিজ, কাইয়ুম সিকিউরিটিজ, রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস, শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ, টি এ খান সিকিউরিটিজ, জেকেসি সিকিউরিটিজ ও কাজী ইক্যুইটিজ। এর মধ্যে আইসিবি সিকিউরিটিজের ৫ জন, রশিদ ইনভেস্টমেন্ট ও শ্যামল ইক্যুইটির ২ জন করে ৪ জন এবং বাকি ৭টির ১ জন করে ট্রেডারকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামল ইক্যুইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো ট্রেডারকে বহিষ্কারসংক্রান্ত কোনো চিঠি হাতে পাইনি। বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। চিঠি হাতে পেলে বিষয়টি জানতে পারব।’
জানা গেছে, ১৫ ট্রেডার আজ সোমবার লেনদেনের শুরুতেই বড় মূলধনি ও ভালো মৌলভিত্তির বেশ কয়েকটি কোম্পানির বড় অঙ্কের শেয়ার কোনো দাম উল্লেখ না করে অর্থাৎ জিরো প্রাইসে বিক্রির আদেশ দেন। তাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন দামে লেনদেন হয়। এতে লেনদেনের শুরুর পরপরই বাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটে।
ধরা যাক, ‘এ ’ কোম্পানির শেয়ারের বাজারমূল্য ১০০ টাকা। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, এ শেয়ারের দাম দিনে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ তথা দুই টাকা কমতে পারবে। তাতে এদিন ‘এ’ কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন বাজারমূল্য কোনোভাবেই ৯৮ টাকার নিচে লেনদেন হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু দিনের শুরুতে ৯টি ব্রোকারেজ হাউসের ১৫টি ওয়ার্কস্টেশন বা ১৫ জন ট্রেডার কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ার মার্কেট প্রাইস বা জিরো প্রাইস ব্যবস্থায় বিক্রির আদেশ দেন। এ ধরনের ব্যবস্থায় শুধু শেয়ারের সংখ্যা উল্লেখ থাকে, দামের ঘরটি থাকে খালি। তাতে স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন দামে লেনদেন হয়।
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ৯টি ব্রোকারেজ হাউসের ১৫টি ওয়ার্কস্টেশন থেকে আইন লঙ্ঘন করে শেয়ারের বিক্রয়াদেশ দেওয়া হয় আজ লেনদেনের শুরুতে। এ কারণে ওই সব ওয়ার্কস্টেশনের ১৫ জন ট্রেডারকে বহিষ্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।