২০২৫ সালে শেয়ারবাজারের ১৩ ব্যাংকের ডিভিডেন্ড নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকের ডিভিডেন্ড দেওয়া নিয়ে সম্প্রতি নতুন একটি নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতিমালা অনুযায়ি, কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি হলে ঐ ব্যাংক আর ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। ২০২৫ সালের ব্যবসায় ডিভিডেন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালাটি কার্যকর হবে।

এর আগে করোনার সময় ২০২০ সাল থেকে ডিভিডেন্ড বিতরণের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। এতদিন কেবল প্রভিশন সংরক্ষণে ডেফারেল সুবিধা নেওয়া ব্যাংকের ডিভিডেন্ড বিতরণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল। এবার নতুন করে নানা রকম শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি ব্যাংক কেবল বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে পারবে। কোনোভাবেই পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড বিতরণ করা যাবে না।

এক্ষেত্রেও আরো কিছু শর্ত মানতে হবে। কোনো ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি হলে ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। ঋণ, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে কোনো ধরনের সংস্থান ঘাটতি থাকা যাবে না।

এছাড়া, যদি কোনও ব্যাংকের জমার হার বা লিকুইডিটি ঘাটতি থাকে, কিংবা যদি তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও ঋণ সুবিধা নেয়, তবে তারা ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। ডিভিডেন্ডের পরিমাণও নির্দিষ্ট করা হয়েছে— তা মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। তবে, যেসব ব্যাংক তাদের মূলধন যথেষ্ট পরিমাণে সংরক্ষণ করতে পারবে, তারা শর্ত অনুযায়ী ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।

আবার সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতির কারণে আরোপিত দণ্ড সুদ ও জরিমানা অনাদায়ি থাকলে ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না। প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডেফারেল সুবিধা বহাল থাকা অবস্থায় ডিভিডেন্ড দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২২ ও ২৪ ধারা যথাযথ পরিপালন করতে হবে।

শেয়ারবাজারের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপি ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে- ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, রূপালি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ি, বর্তমানে খেলাপী ঋণের পরিমাণ-আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৯০.৭২ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৮৭.৯৮ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৬০.৫০ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ৩৮.৫৯ শতাংশ , সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৪.৭৯ শতাংশ, রূপালি ব্যাংকের ৩১,৭৩ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩০.৮৬ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২৯.৩৩ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ২৫.৯৯ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংকের ২১.০৮ শতাংশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ১২.১১ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের ১০.৫৮ শতাংশ ও ব্যাংক এশিয়ার ১০ শতাংশ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নীতিমালা ২০২৫ সালের ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ২০২৪ সালের ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে ২০২১ সালের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

তবে পূর্বের নির্দেশনায় ডেফারেল সুবিধা গ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর জন্য ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ডেফারেল সুবিধা গ্রহণকারী ব্যাংক ২০২৪ সালের জন্য কোন ধরনের ডিভিডেন্ড বিতরণ করতে পারবে না।

তবে নতুন নীতিমালা নিয়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের কঠোর নীতিমালার ফলে ব্যাংকগুলো তাদের ব্যালেন্স শিট শক্তিশালী করতে উদ্যমী হবে এবং শেয়ারহোল্ডারদের রিটার্নের চেয়ে বেশি নজর দেবে আমানতের সুরক্ষায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *