নিজস্ব প্রতিবেদক: স্টক এক্সচেঞ্জে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনের মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত (vibrant) বন্ড মার্কেট গড়ে তােলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে একটি সমঝােতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রবিবার (১২ জুন) বেলা ১২.০০ টায় অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্লাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড এর মধ্যে সমঝােতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন রেহানা পারভীন, অতিরিক্ত সচিব, (টিডিএম) অর্থ বিভাগ।
এছাড়াও স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্লাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন চালুকরণ কার্যক্রম বিষয়ে উক্ত অনুষ্ঠানে যৌথভাবে একটি উপস্থাপনা পেশ করেন শেখ মােঃ লুৎফুল কবির, অতিরিক্ত পরিচালক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং আনােয়ার হােসেন, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
সমঝােতা স্মারক স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে বক্তব্য প্রদান করেন, ডঃ শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, কমিশনার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, কাজী ছাইদুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক, শুভ্র কান্তি চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, আব্দুস সালাম শিকদার, চেয়ারম্যান, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড, আসিফ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি এবং মােঃ ইউনুসুর রহমান, চেয়ারম্যান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড।
সমঝােতা স্মারক স্বাক্ষরকারী সকল পক্ষের নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ সমঝােতা স্মারকে স্বাক্ষর প্রদান করেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর পরিচালক মােঃ আবুল কালাম, বাংলাদেশ ব্যাংক এর পরিচালক (ডিএমডি) খন্দকার সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মােঃ গােলাম ফারুক এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সমঝােতা স্মারকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর প্রদান করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গর্ভনর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, পুঁজিবাজার এবং মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির আরাে উন্নতি হবে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এই যৌথ পদক্ষেপকে একত্রে কাজ করার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন। সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারী লেনদেন স্টক এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্মে করার মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত (vibrant) বন্ড মার্কেট গড়ে উঠবে এবং পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরাে উল্লেখ করেন যে, একটি প্রাণবন্ত (vibrant) বন্ড মার্কেট গড়ে উঠলে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমে আসবে এবং Non-performing Loan (NPL) ও কমে আসবে। বর্তমান ১৬% Market cap. to GDP ratio কে দ্বিগন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরাে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ভবিষ্যতেও একত্রে সমন্বয় ও পরস্পর সহযােগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাবে।
সমঝােতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে সাধারণ বিনিয়ােগকারীরা BOID-র মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের দেশকে আরাে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। এর ফলে সাধারণ বিনিয়ােগকারীরা পুঁজিবাজারের স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ BOID-তে ক্রয় বিক্রয় করতে সক্ষম হবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারে লেনদেনকৃত সরকারি সিকিউরিটিজ এর অভিহিত মূল্য হবে ১০০ টাকা এবং মার্কেট লট হবে ১০০০ অর্থাৎ ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা অভিহিত মূল্যের সরকারি সিকিউরিটিজ স্টক এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্মে লেনদেন করা যাবে।
উল্লেখ্য যে, বিনিয়ােগকারীরা yield অথবা price দর উল্লেখপূর্বক সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন। বিক্রেতা বিক্রয়মূল্যের সাথে accrued interest/profit ও পাবেন এবং ক্রেতা বা বন্ডহােল্ডার কুপন ডেট-এ কুপনের অর্থ ব্যাংক একাউন্টে BEFTN এর মাধ্যমে জমা পাবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সাধারণ বিনিয়ােগকারীরা তাদের পাের্টফোলিও তে সরকারি সিকিউরিটিজ এর মতাে ঝুঁকিবিহীন সিকিউরিটিজ অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন, ফলে বিনিয়ােগকারীর পাের্টফোলিও ঝুঁকি কমে যাবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে আভ্যন্তরীণ খাত হতে অর্থ সংগ্রহের সুযােগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা কমে আসবে।
এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট তৈরী হবে এবং বাজার মূলধন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। সরকারি সিকিউরিটিজ সেকেন্ডারি বা স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্লাটফরমে লেনদেনের কারণে বিভিন্ন মেয়াদের বন্ডের yield curve পাওয়া যাবে। এই yield curve এর ভিত্তিতে অন্যান্য বন্ডের কুপন অথবা সুদহার/লভ্যাংশ নির্ধারণ করা সহজ হবে এবং yield curve এর ভিত্তিতে বিভিন্ন মেয়াদের বন্ডের ভবিষ্যত সুদহার/লভ্যাংশ প্রাক্কলন করা যাবে।