তারল্য সংকটের প্রভাবে সম্প্রতি অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে। এরই মধ্যে গত এক মাসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ অর্ধেকে নেমে গেছে। এ অবস্থায় তারল্য সংকট মেটাতে আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে শর্তহীনভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আসন্ন বাজেটে বিবেচনার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বেশকিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোনো শর্ত ছাড়াই ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া, করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা দ্বিগুণ করা, লভ্যাংশের ওপর উৎসে কেটে নেয়া করকেই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচনা করা, জিরো কুপন বন্ডের ক্ষেত্রে দেয়া সুবিধা কুপন বিয়ারিং বন্ডের জন্যও প্রদান করা এবং তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ রাখা। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে অপ্রদর্শিত অর্থ শর্তহীনভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন। এরই মধ্যে এসব বাজেট প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, সার্বিকভাবে এগুলো বিবেচনায় নেয়া হলে পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়বে। এতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
পুঁজিবাজারের তারল্য পরিস্থিতি: দেশের পুঁজিবাজারের তারল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে ডিএসইর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল যথাক্রমে ৮২৩ কোটি টাকা ও ২ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৪৬৭ কোটি টাকা ও সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮২ কোটি টাকার লেনদেন হয়। মার্চে সর্বনিম্ন ৩৮২ কোটি ও সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এপ্রিলে সর্বনিম্ন ৪৫১ ও সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। মে মাসে লেনদেন সর্বনিম্ন ছিল ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। জুনে সর্বনিম্ন ১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মধ্যে লেনদেন হয়। পরের মাসে সর্বনিম্ন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল ১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আগস্টে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা ও ২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৭৬২ কোটি ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯০১ কোটি টাকা লেনদেন হয়। অক্টোবরে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩১০ ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। নভেম্বরে সর্বনিম্ন লেনদেন ছিল ৭০৮ কোটি টাকা। ওই মাসে সর্বোচ্চ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল যথাক্রমে ৬৫২ কোটি টাকা ও ১ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এ বছরের জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন লেনদেন ছিল ৮৯৪ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল ১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৭৩০ ও সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সর্বশেষ মার্চে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল যথাক্রমে ৬১৬ ও ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বর থেকেই পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ কমতে শুরু করে, যা চলতি বছরের এপ্রিলে এসে আরো তীব্র হয়েছে। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত পাঁচ কার্যদিবসে সর্বনিম্ন ৪৯০ কোটি ও সর্বোচ্চ ৮৩৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে।