পুঁজিবাজারে ধস: আপাতত কিছুই করবে না বিএসইসি

পুঁজিবাজারে দরপতনের পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার সুফল না পাওয়ার পর এ বিষয়ে আপাতত আর কোনো উদ্যোগ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।সংস্থাটি পুঁজিবাজারকে আপন গতিতে চলতে দিতে চাইছে। তারা মনে করছে, এভাবেই বাজার স্বাভাবিক হবে।

মন্দা পুঁজিবাজার রোজার শুরু থেকে বিনিয়োগকারীদেরকে আতঙ্কের মধ্যে রাখছে। ১১ কর্মদিবসে প্রায় তিন শ পয়েন্ট সূচক পড়েছে। লেনদেন নেমে এসেছে চার শ কোটি টাকার নিচে। বাজার যখন চাঙা ছিল, তখন আধা ঘণ্টাতেই এই পরিমাণ লেনদেন হতো।

এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়ার পর থেকে বাজারে শেয়ারের ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিমাণ দর কমার পর ক্রেতা উধাও হয়ে যাচ্ছে। দাম আরও কমে যায় কি না, এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে চাইছে বিনিয়োগকারীরা, ফলে পরের দিনও একই ঘটনা ঘটছে। আর ক্রেতা না থাকা দরপতনকে আরও তড়ান্বিত করছে।রোজা শুরুর আগের সপ্তাহে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বসে বিএসইসি তাদেরকে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করলেও রোজার শুরু থেকে তাদের ভূমিকা একেবারেই পর্যবেক্ষকের। কোনো উদ্যোগ, বক্তব্য-কিছুই আসছে না বিএসইসি থেকে।

জানতে চাইলে সংস্থাটির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন আমরা চিন্তা করছি যে, মার্কেট নিজ গতিতে পুনরায় ফিরে আসবে।

বাজারে ক্রেতা উধাও, দিন দিন পুঁজি কমছে বিনিয়োগকারীদের, আস্থার সংকট চরমে, এই অবস্থায়ও বাজারে কোনো সমস্যা দেখছেন না তিনি। বলেন, এটা এপ্রিল মাস, রোজার মাস, ঈদ আছে সামনে, অ্যাডজাস্টমেন্ট হচ্ছে। যার কারণেই হয়ত ট্রানজেকশন কিছু কম হচ্ছে। মার্কেট ইজ ওকে। ইট উইল টেক সাম টাইম। নাথিং টু ওরি অ্যাবাউট ইট। কোনো ধরনের গুজবের মুখোমুখি যেন কেউ না হয় এটাই বলব। একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

রোজায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর যে ৩০০ কোটি টাকা আর প্রতিটি ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি করে মোট আড়াই শ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ছিল, তার অগ্রগতি কতদূর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো তাদেরকে নির্দেশ দিতে পারি না। আমরা তাদেরকে বলেছি, তাদেরও হয়ত একটু সময় লাগছে সিদ্ধান্ত নিতে। বাট, ইটস বায়ারস মার্কেট। আমি আশা করি, তারা যে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, সেগুলো অচিরেই ব্যবহার করবে।

দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করা বাজারের জন্য নেতিবাচক হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিএসইসির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এটা নিয়ে অনেক ডিবেট আছে। অনেকে চায়, অনেকে চায় না। আমরা যা করেছি, মনে করি সেই সময় এটাই ঠিক ছিল।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে পুঁজিবাজারে ধস দেখা দেয়। পতন রোধে ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বাজার মধ্যস্ততাকারীদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বৈঠক করে। এসব বৈঠকে বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার করে সব পক্ষই।

এমনকি রোজায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ৩০০ কোটি টাকা আর প্রতিটি স্টক ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি করে আড়াইশ কোটি টাকা লেনদেনের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল। এই ঘোষণা আসার পর রোজা আসার শেষ কর্মদিবসে লেনদেন বেড়ে এক হাজার একশ কোটি টাকা ছাড়ায়।এর আগে বিএসইসির সঙ্গে ৩৩ ব্যাংকের প্রতিনিধি বৈঠক করে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার করে।

গত ৯ মার্চের বৈঠক শেষে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের নিচে রয়েছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে ২ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াবে। এতে করে শেয়ারবাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়বে।

ব্যাংকগুলোর জন্য ঘোষিত ২০০ কোটি টাকার ফান্ড এখনও যেসব ব্যাংক গঠন করেনি, তারা তা করবেন বলে আজকের সভায় জানিয়েছেন। এরপর সক্ষমতা অনুযায়ী তারা বিনিয়োগ করবেন। এ ছাড়া যারা ফান্ড গঠন করে এখনও বিনিয়োগ করেননি, তারা বিনিয়োগ করবেন।পরদিন মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে বৈঠক শেষেও বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার করা হয়।

কিন্তু রোজার শুরু থেকেই লেনদেন ক্রমেই কমতে থাকে। এর মধ্যে নতুন সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সূচক ৩০ পয়েন্ট কমার পর দিন এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সূচক কমে ৮০ পয়েন্টের বেশি। প্রায় সব কোম্পানির দরপতনের বিরল দৃশ্য দেশে বিনিয়োগকারীরা, যা ২০১০ সালের মহাধসের স্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছে।তবে বাজার পতনের কারণ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের বিনিয়োগের বিষয়ে কথা বলতে চান না মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান। বাজারপতনের কারণ ও মাচেন্ট ব্যাংকের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নো কমেন্টস’।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *