নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ২০২১ সাল শেষে ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮১ শতাংশে। পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক নির্দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। এসব কারণে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়েশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যাংকটির নিরীক্ষক এমজে আবেদীন অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
ব্যাংকটির নিরীক্ষক তার মতামতে উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালে ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। যা আগের বছরে ছিল ১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকায়। ২০২১ সালে ব্যাংকটির ঋণাত্মক ইকুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। যা আগের বছরে ছিল ১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ২০২১ সাল শেষে ঋণাত্মক ১৩৭ দশমিক ৪১ শতাংশ হয়েছে। যা ২০২০ সালে ছিল ঋণাত্মক ১৩৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। যেখানে ব্যাসেল-৩ অনুসারে মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ন্যূনতম সাড়ে ১২ শতাংশ থাকার কথা।
ব্যাংকটির মুনাফা দিতে হয় এমন আমানতের পরিমাণ ২০২১ সাল শেষে ৮৭৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল ৭৪৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মুনাফা হয় এমন বিনিয়োগের পরিমাণ ২০২১ সালে ১৬১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা আগের বছরে ছিল ১৮৫ কোটি টাকা।ব্যাংকটির মোট বিনিয়োগের ৮০ দশমিক ৮০ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি হয়ে গেছে। যা ২০২০ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এসব কারণে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষকের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটি বলছে, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের আগের পরিচালকরা তাদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দায়ের করেছেন। এটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আশাবাদী যে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে আসবে, যা ব্যাংকটিতে নতুন মূলধন জোগানের পথ খুলে দেবে। ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন পণ্য চালুর মাধ্যমে ব্যাংকটি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করছে। চলতি মূলধন ঘাটতি মেটাতে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প ও পরিকল্পনা বিবেচনাও করছে ব্যাংকটি।
গত বছরের ২১ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটিকে অনাদায়ী আমানত পরিশোধের অনুমোদন দিয়েছে। বিলম্বে দেনা পরিশোধের জন্য গত বছরের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।
সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২১ অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। আলোচ্য অর্থবছরে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৯ পয়সা। যেখানে আগের অর্থবছরে লোকসান ছিল ২৮ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ১৩ পয়সা মাইনাস।